এজাহারভুক্ত মামলার প্রধান আসামি এখন ময়মনসিংহ কোতোয়ালীর ওসি,

২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সংঘটিত সহিংসতার এক মামলায় এজাহারভুক্ত প্রধান আসামি হয়েও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হিসেবে পুনরায় দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন মিজানুর রহমান। সম্প্রতি তিনি ময়মনসিংহ কোতোয়ালী মডেল থানায় ওসি পদে যোগদান করেছেন, যা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়োগ প্রক্রিয়া এবং নৈতিকতা নিয়ে।

ময়মনসিংহ জেলার পুলিশ সুপার কাজী আখতার উল আলমের স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশ অনুযায়ী, মিজানুর রহমান ১৯ মে ২০২৫ তারিখে কোতোয়ালী থানার ওসি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এর আগে তিনি ভালুকা মডেল থানায় পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশন) পদে কর্মরত ছিলেন।

তবে বিষয়টি বিতর্কের জন্ম দিয়েছে, কারণ মিজানুর রহমান বর্তমানে একটি রাজনৈতিক সহিংসতার মামলার প্রধান আসামি। ২০২৪ সালের ১৮ আগস্ট বিএনপি নেতা নুরনবী বাচ্চুর দায়ের করা একটি মামলায় তাঁর নাম ১ নম্বর আসামি হিসেবে উল্লেখ করা হয়। মামলাটি নোয়াখালীর সেনবাগ থানায় রুজু হয় (মামলা নং-৯২)। অভিযোগে বলা হয়, ২০১৮ সালের নির্বাচনের সময় বিএনপি নেতাকর্মীদের বাড়িঘরে হামলা, লুটপাট, মারধর এবং ভয়ভীতির মাধ্যমে অর্থ আদায়ের মতো ঘটনা ঘটান মিজানুর রহমান ও তাঁর সহকর্মীরা।

মামলাটি দণ্ডবিধির একাধিক ধারা—১৪৩ (অবৈধ সমাবেশ), ৩৬৫ (অপহরণ), ৩৮৬ (চাঁদাবাজি), ৫০৬ (হুমকি) সহ ১২টি ধারায় রুজু হয়। সেনবাগ থানার তৎকালীন ওসি মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে এজাহারে সরাসরি অভিযোগ আনা হয় এবং মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই আব্দুর রউফ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, “এটি একটি রাজনৈতিক সহিংসতার মামলা। মিজানুর রহমান স্যার এখনো জামিন নেননি।”

সেনবাগ থানার বর্তমান ওসি মো. নাজিম উদ্দিনও মামলার অস্তিত্ব ও আসামির নামের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

মিজানুর রহমানের কাছ থেকে এ বিষয়ে বক্তব্য পাওয়ার চেষ্টা করা হলেও তাঁর সরকারি মোবাইল নম্বরে বারবার ফোন করা হলেও তিনি সাড়া দেননি। অন্যদিকে, ময়মনসিংহ কোতোয়ালী থানার ওসি (তদন্ত) সাইফুল ইসলাম জানান, “স্যার অফিসে যোগ দিয়েই ছুটিতে চলে গেছেন।”

পুলিশ প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ের একজন কর্মকর্তা, যিনি একটি মামলার প্রধান আসামি, তাঁর এমন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে বহাল থাকায় সমালোচনার ঝড় উঠেছে রাজনৈতিক এবং প্রশাসনিক মহলে। সংশ্লিষ্ট মহল এই পদায়নকে অস্বাভাবিক এবং উদ্বেগজনক বলছে। তারা মনে করছে, বিচারাধীন মামলায় অভিযুক্ত একজন কর্মকর্তাকে ওসি হিসেবে পদায়ন করা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিরপেক্ষতা ও পেশাদারিত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলে।

এ বিষয়ে ময়মনসিংহের পুলিশ সুপারের মন্তব্য জানতে একাধিকবার চেষ্টা করা হলেও তিনিও ফোন রিসিভ করেননি।

এই ঘটনায় সরকার এবং পুলিশের উচ্চ মহলের ভূমিকা নিয়েও নানা আলোচনা শুরু হয়েছে। আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একজন এজাহারভুক্ত আসামি পুলিশ কর্মকর্তার এভাবে ওসি হিসেবে পদায়ন সাংবিধানিক ও আইনগতভাবে প্রশ্নবিদ্ধ।
#মিজানুররহমান #পুলিশপদায়নবিতর্ক #ময়মনসিংহওসি #এজাহারভুক্তআসামি #বাংলাদেশসংবাদ #রাজনৈতিকসহিংসতা #আইনওবিচার #DMP #BDNews2025

Post a Comment

Previous Post Next Post