কিশোরগঞ্জ-করিমগঞ্জ সড়কের দুরাবস্থা: যানজটে নাকাল যাত্রী ও চালকরা, সংস্কারের দাবি জোরালো

সংবাদ প্রতিবেদন:
কিশোরগঞ্জ-করিমগঞ্জ সড়ক বর্তমানে ভয়াবহ দুরবস্থার শিকার। জেলার অন্যতম ব্যস্ততম এই সড়কটি একরামপুর মোড় থেকে সাতাল মোড় পর্যন্ত দীর্ঘ সময় ধরে খানাখন্দে ভরা থাকায় প্রতিদিন অসংখ্য মানুষকে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বিশেষ করে সামান্য বৃষ্টিপাতেই রাস্তার অবস্থা আরও করুণ হয়ে উঠছে, সৃষ্টি হচ্ছে দীর্ঘ যানজট এবং দুর্ঘটনার আশঙ্কা।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, সড়কটির অনেকাংশেই কেবল ইট বসানো থাকলেও পাকা ঢালাই এখনো দেওয়া হয়নি। ফলে ভারী যানবাহন চলাচলের সময় সৃষ্টি হচ্ছে প্রচণ্ড ঝাঁকুনি। এতে যাত্রীদের যেমন শারীরিক কষ্ট হচ্ছে, তেমনি যানবাহনেরও ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। স্থানীয় এক অটোরিকশা চালক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, "আমি কিস্তিতে অটো কিনছি, এখনো টাকা শোধ হয়নি। কিন্তু রাস্তায় এমন ধকল, মাত্র ৮ মাসেই ব্যাটারি নষ্ট। এই অবস্থা চলতে থাকলে চালানোই দায় হয়ে যাবে।"

শুধু চালক নয়, ভুক্তভোগী পথচারী এবং দোকানদাররাও জানাচ্ছেন একই অভিযোগ। শোলাকিয়া সাতাল মোড়ের পাশে থাকা এক দোকানদার বলেন, "গত ১৫ দিনের বৃষ্টিতে রাস্তার অবস্থাই খারাপ হয়ে গেছে। গর্তের মধ্যে পানি জমে থাকে, আর সেটা চোখে না পড়ায় প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে। দুদিন আগে এক অটোরিকশা উল্টে যাত্রী আহত হয়েছে।"

অবিরাম যানজট ও রাস্তার বেহাল অবস্থার কারণে করিমগঞ্জ, মিঠামইন, ইটনা, অষ্টগ্রাম ও নিকলীসহ আশেপাশের বিভিন্ন উপজেলা থেকে আগত যাত্রীদের প্রতিদিন ২০ মিনিট থেকে শুরু করে এক ঘণ্টা পর্যন্ত জটে আটকে থাকতে হচ্ছে। এতে শুধু সময়ের অপচয় নয়, অর্থনৈতিক ক্ষতিও হচ্ছে ব্যাপক। কৃষিপণ্য পরিবহন, পণ্য আমদানি-রপ্তানি এমনকি চিকিৎসা সেবার জন্যও এই সড়ক ব্যবহারকারীরা পড়ছেন চরম সমস্যায়।

বিশেষ করে হাওর অঞ্চলের ধান কাটা মৌসুমে এই সড়কের গুরুত্ব বহুগুণে বেড়ে যায়। স্থানীয় কৃষকরা ধান পরিবহনের জন্য বিকল্প রাস্তা না পেয়ে এই দুর্ভোগ পেরিয়ে তাদের ফসল গন্তব্যে পৌঁছাতে বাধ্য হচ্ছেন। চামড়া বন্দর ও বালিখোলা ঘাট হয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ ও পণ্য এই সড়ক ব্যবহার করে।

যদিও দীর্ঘদিন ধরে সড়কটির এই দুরাবস্থার কথা স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের জানানো হয়েছে, তবুও এখন পর্যন্ত কার্যকর কোনো সংস্কার কাজ শুরু হয়নি। বরং দিনদিন পরিস্থিতি আরও খারাপ হচ্ছে। জনসাধারণের দাবি, অবিলম্বে এই গুরুত্বপূর্ণ সড়কটির পূর্ণাঙ্গ সংস্কার ও মেরামতের কাজ শুরু করা হোক। তা না হলে ভবিষ্যতে বড় দুর্ঘটনা এবং আরও বড় বিপর্যয়ের আশঙ্কা রয়েছে।

সচেতন মহল ও ভুক্তভোগীরা কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসন এবং সড়ক ও জনপথ বিভাগের কাছে অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের অনুরোধ জানিয়েছেন। তারা মনে করেন, এই সড়কটির উন্নয়ন হলে শুধু দুর্ভোগ লাঘবই হবে না, বরং অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডও অনেকাংশে গতি পাবে।

Post a Comment

Previous Post Next Post