তীব্র দাবদাহের পর কিশোরগঞ্জে স্বস্তির বৃষ্টি, শঙ্কায় হাওরের কৃষকরা

দীর্ঘদিনের খরতাপ ও দাবদাহের পর অবশেষে কিছুটা স্বস্তি পেল কিশোরগঞ্জবাসী। বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) বিকেলে জেলার বিভিন্ন অংশে নেমে আসে বহুল প্রত্যাশিত বৃষ্টি, যা শহর থেকে শুরু করে বেশ কিছু উপজেলা জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। তবে এ স্বস্তির বৃষ্টির মাঝেই চিন্তার ভাঁজ পড়েছে হাওর এলাকার কৃষকদের কপালে।

জানা গেছে, বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টা ৪৫ মিনিটের দিকে হঠাৎ করেই আকাশ কালো হয়ে আসে এবং কিছুক্ষণের মধ্যেই শুরু হয় টানা বৃষ্টি। এই বৃষ্টির সঙ্গে ছিল হালকা ঝড়ো হাওয়া, যা প্রচণ্ড গরমে হাঁসফাঁস করা মানুষকে খানিকটা স্বস্তি এনে দেয়। শহরাঞ্চলের মানুষ এই বৃষ্টিকে স্বাগত জানালেও হাওরাঞ্চলের কৃষকরা আশঙ্কার কথাই বলছেন।

নিকলী আবহাওয়া অফিসের সহকারী কর্মকর্তা (বেলুন মেকার) আলতাফ হোসেন জানান, বিগত কয়েকদিন ধরে কিশোরগঞ্জে তীব্র তাপদাহ বিরাজ করছিল। বুধবার জেলার তাপমাত্রা ছিল ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত তা ছিল ৩৪.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এমন খরতাপের মাঝে হঠাৎ বৃষ্টির দেখা পাওয়া নিঃসন্দেহে স্বস্তির বিষয়।

তবে আলতাফ হোসেন আরও জানান, শুধু এই বৃষ্টিতেই শেষ নয়। আগামী শুক্রবার এবং শনিবার জেলায় হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টিপাত এবং দমকা হাওয়ার পূর্বাভাস রয়েছে। ফলে কৃষিকাজে কিছুটা প্রভাব পড়তে পারে বলেও জানান তিনি।

বৃষ্টির কারণে শহরের সাধারণ মানুষ কিছুটা স্বস্তি পেলেও হাওরের কৃষকদের মধ্যে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। কারণ এ সময়ে বোরো ধান কাটা ও সংগ্রহের গুরুত্বপূর্ণ সময়। এই সময় কোনো ধরনের শিলাবৃষ্টি বা বজ্রপাত হলে ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে।

নিকলী উপজেলার হাওরাঞ্চল থেকে কৃষক হাবিবুর রহমান বলেন, “আমরা এখন ধান কাটার প্রস্তুতি নিচ্ছি। যদি ভারী বৃষ্টিপাত শুরু হয় বা শিলাবৃষ্টি নামে, তাহলে ধানের মারাত্মক ক্ষতি হবে। এতে আমাদের মৌসুমি উৎপাদনে বড় ধরনের বিপর্যয় ঘটবে।”

তিনি আরও জানান, এ অঞ্চলের কৃষকেরা মূলত বোরো ধানের উপর নির্ভরশীল। এই ফসল যদি কোনো কারণে নষ্ট হয়ে যায়, তাহলে অনেক পরিবারকেই চরম দুর্ভোগে পড়তে হবে। বিশেষ করে যেসব কৃষক ইতোমধ্যে ধান কাটতে শুরু করেছেন, তাদের জন্য ঝুঁকি আরও বেশি।

এদিকে, হাওরাঞ্চলের বিভিন্ন ইউনিয়নে স্থানীয় কৃষক নেতারাও একই রকম উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তাদের দাবি, সরকারের পক্ষ থেকে আগাম প্রস্তুতির অংশ হিসেবে কৃষি অফিস, স্থানীয় প্রশাসন এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগকে আরো সক্রিয় হতে হবে।

সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে নিম্ন আয়ের শ্রমজীবী মানুষের জন্য এই বৃষ্টি কিছুটা স্বস্তি এনে দিয়েছে ঠিকই, কিন্তু কৃষিজ অর্থনীতিনির্ভর এই জেলায় এমন সময়ে ভারী বৃষ্টিপাত পরিস্থিতিকে উদ্বেগজনক করে তুলতে পারে। ফলে কৃষক এবং প্রশাসনের সমন্বয়ে প্রয়োজন হতে পারে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের।


Post a Comment

Previous Post Next Post