ভৈরবের বঁধুনগরের সাহসী সন্তান মো. দূর্জয়, যিনি ২০২৩ সালের ঐতিহাসিক জুলাই আন্দোলনে নিজের জীবন বাজি রেখে অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলেন, আজ ফেনীর এক ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন। তার এই অকাল মৃত্যুতে কিশোরগঞ্জ থেকে শুরু করে দেশের নানা প্রান্তে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
দূর্জয় শুধু একটি নাম নয়, বরং একটি প্রতীক—যিনি সমাজের অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে ছিলেন। ২০২৩ সালের জুলাইয়ে যখন সারাদেশে উত্তাল গণআন্দোলন চলছিল, সেই সময় ভৈরবে সবচেয়ে বেশি গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন এই তরুণ। আহত হয়েও অন্যায়ের কাছে মাথা নত করেননি। আজ সেই বীরের করুণ মৃত্যু সংবাদ সবাইকে শোকাভিভূত করেছে।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, দূর্জয়ের পিতার নাম ইসমাইল মিয়া এবং তাদের বাড়ি কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরব উপজেলার শ্রীনগর ইউনিয়নের বঁধুনগর গ্রামে। সরকারিভাবে তাকে ‘জুলাই যোদ্ধা’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয় এবং তার মেডিকেল কেস আইডি ছিল ২৬০৮৮, গেজেট নম্বর ১০৬।
আজ শনিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ফেনী-মাইজদী সড়কে ভয়াবহ এই দুর্ঘটনাটি ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্যমতে, দূর্জয় মোটরসাইকেলে করে কর্মস্থলের দিকে যাচ্ছিলেন। একটি বেপরোয়া গতির ট্রাক তার পথরোধ করে এবং সরাসরি ধাক্কা দিলে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছায় এবং মরদেহ উদ্ধার করে ফেনী সদর হাসপাতালে প্রেরণ করে।
তার মৃত্যুতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শোকের জোয়ার বইছে। অনেকেই লিখেছেন, "যে ছেলেটি একদিন বুক পেতে দিয়েছিল মানুষের অধিকারের জন্য, সে আজ চলে গেল চিরতরে।" অনেকে তার আত্মার মাগফিরাত কামনা করে দোয়া করছেন।
দূর্জয়ের সহযোদ্ধা ও জুলাই আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক রাশেদ খান বলেন, “দূর্জয় ছিল সাহসের এক জীবন্ত উদাহরণ। তার মতো একজন তরুণকে আমরা হারিয়ে ফেলেছি, যিনি অন্যায়ের বিরুদ্ধে নিজের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন।”
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের জুলাই মাসে দেশে বিদ্যুৎ সংকট, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি এবং রাজনৈতিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে ব্যাপক আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। ভৈরব ছিল এই আন্দোলনের একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। তখন বহু যুবক রাস্তায় নেমে আসে। পুলিশের গুলিতে অনেকেই আহত হন, কিন্তু সবচেয়ে গুরুতরভাবে গুলিবিদ্ধ হন দূর্জয়। এরপর তার চিকিৎসা চলে দীর্ঘদিন। সে সময় দেশজুড়ে তার সাহসিকতা প্রশংসিত হয়।
দূর্জয়ের মৃত্যুতে তার গ্রামের বাড়িতে শোকের মাতম চলছে। পরিবার ও আত্মীয়স্বজনদের মধ্যে বিরাজ করছে গভীর শোক ও বেদনাবোধ। আজ বাদ আছর তার জানাজা নামাজ অনুষ্ঠিত হবে এবং পরে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হবে।
এই মর্মান্তিক ঘটনায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও শোক প্রকাশ করেছেন। ভৈরব উপজেলা চেয়ারম্যান এক শোকবার্তায় বলেন, “দূর্জয়ের মৃত্যু আমাদের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি। তার আত্মত্যাগ আমাদের নতুন প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করবে।”
একজন সাহসী আন্দোলনকারী হিসেবে দূর্জয়ের নাম ইতিহাসে অমলিন থাকবে। তার জীবন ও মৃত্যু ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর সাহস জোগাবে।
Post a Comment